বিশেষ প্রতিনিধিঃ অমাবস্যা জোয়ারের কারণে সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি এবং উজানের পানির ঢলের চাপে কীর্তনখোলা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। কীর্তনখোলায় মৌসুমের রেকর্ড জোয়ারের পানি বৃদ্ধিতে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বরিশালে।
নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় তলিয়ে গেছে নগরীর অপেক্ষাকৃত নিম্নাঞ্চল। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে পানির উচ্চতা আর জলমগ্ন হয়ে পড়ছে বরিশাল নগরীর নতুন নতুন এলাকা। ডুবে গেছে পাড়া-মহল্লার রাস্তাঘাট। এমনকি বাসাবাড়িতে পর্যন্ত ঢুকে পড়েছে পানি।
রোববার থেকে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে নগরীর মৃতপ্রায় খালগুলো। যেসব এলাকায় এখনও খালের অবশিষ্টাংশ টিকে রয়েছে, এমনসব এলাকায় এই ভোগান্তি বেশি।
তবে সবচেয়ে দুর্ভোগে রয়েছেন শহর রক্ষা বাঁধসংলগ্ন বাসিন্দারা। জলমগ্ন হয়ে পড়া এসব পরিবার রয়েছে দারুণ কষ্টে। এছাড়া খাল বা ড্রেনের পানি থেকে পানিবাহিত রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে এ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পানি বৃদ্ধির রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে কীর্তনখোলায়। এ অবস্থায় আবহাওয়া অনুকূলে না যাওয়া পর্যন্ত পানি বন্দিদশা সহসাই কাটছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, বরিশাল শহর রক্ষা বাঁধসংলগ্ন স্টেডিয়াম কলোনি, কেডিসি, নামারচর, ভাটারখাল, পোর্টরোড, শ্রীনাথ চ্যাটার্জি লেন, বগুড়া রোড, পলাশপুর, রসুলপুরের পাড়া-মহল্লা নদীতে জোয়ার আসার সঙ্গে সঙ্গেই জলমগ্ন হয়ে পড়ছে। নতুন করে জলমগ্ন হচ্ছে সাগরদী, রুপাতলী হাউজিং, আলেকান্দা, কাউনিয়া, ভাটিখানার বসতবাড়ি-রাস্তাঘাট। যদিও ভাটার টানে আবার পানি নেমে যাচ্ছে দ্রুতই। তবে রেখে যাচ্ছে ভোগান্তি এবং ক্ষয়ক্ষতির ছাপ।
শ্রীনাথ চ্যাটার্জি লেনের বাসিন্দা এনায়েত করিম বলেন, বাড়িঘরে থাকার উপায় নেই। রান্না-বান্না সব চৌকির ওপরই সারতে হচ্ছে। তারা কলোনিতে দীর্ঘদিন যাবত বাস করলেও জলমগ্ন হয়ে পড়ার এমন অবস্থা আগে কখনও দেখেননি।
ভাটারখালের বাসিন্দা হকার হায়দার আলী জানান, গত ৩ দিন ধরে দুই দফা অস্বাভাবিক জোয়ারের কবলে পড়ছেন। ঘর থেকে বাইরে বেরুতেও বেগ পেতে হচ্ছে। আয় রোজগারও বন্ধের পথে। দ্রুত এ পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটলে অর্থনৈতিকভাবে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তার।
এদিকে পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখিত এলাকার রাস্তাঘাট। বিটুমিনের আবরণ সরে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছে বালু-পাথরের আস্তরণ। হতশ্রী রূপধারণ করা এসব এলাকার সড়কগুলো সংস্কারে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা।
ক্ষতিগ্রস্ত ভাটিখানা এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম স্বপন জানান, গত ৩ দিন যাবত জোয়ার আসার সঙ্গে সঙ্গেই সংলগ্ন খাল উপচে তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। গত জুলাই মাসেও এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে এলাকার মূল সড়কটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও ওই এলাকার জনপ্রতিনিধির এ বিষয়ে কোনো মাথাব্যথা আছে বলে তার মনে হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে তার গৃহীত কোনো পদক্ষেপ যেমন দেখা যায়নি, তেমনি তাকে দেখা যায়নি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনেও।
এ বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জেরাল্ড অলিভার গুডা জানান, বিটুমিন দিয়ে তৈরি সড়কের মূল শত্রু হচ্ছে পানি। কার্পেটিং রাস্তার ক্ষেত্রেও একই বিষয় বিদ্যমান।
তিনি বলেন, সড়কে পানি জমার স্থান থেকেই মূলত ‘পচনের’ সৃষ্টি হয়। আর সড়ক হারায় তার বাইন্ডিং ক্যাপাসিটি (ধরে রাখার শক্তি)। তাই যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখতে যত দ্রুত সম্ভব পানি অপসারণ এবং ভাঙা স্থান সংস্কারের বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেছেন তিনি।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ৩ দিনে কীর্তনখোলায় রেকর্ড ৪৫ সেন্টিমিটার পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সর্বশেষ গত জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ৩০ সেমি. পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল কীর্তনখোলায়। বর্তমানে নদীর পানি বিপৎসীমার ৩.০০ মিটারে অবস্থান করছে। যার স্বাভাবিক অবস্থায় থাকার কথা ছিল ২.৫৫ মিটার। পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে বরিশাল বিভাগের অন্যান্য নদ-নদীতেও।
অমাবস্যার জোয়ার এবং বৃষ্টির কারণে পানি বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করে শিগগিরই এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটবে বলে জানিয়েছে পাউবো সূত্র।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply